ধর্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন জহির উল হক ২১ জুন, ২০১৩, ১০:৪০:৪২ সকাল
যৌতুক প্রথার মত সামাজিক ব্যাধিকে পেছনে ফেলে ধর্ষণ নামক ব্যাধিটি বর্তমান সময়ে মারাত্মক ভাবে মহামারি আকার ধারণ করেছে ।প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজে খুব সুন্দরভাবে ধর্ষণের ঘটনা সাংবাদিক সাহেবরা ফুটিয়ে তুলে ।সেখানে বিশেষ কিছু জড়িত থাকলে বিশেষ বিশেষ জনেরা সমালোচনার ঝড় তুলে ঐ বিশেষ কিছুকেই নিয়ে ।আসল ইস্যু ,ধর্ষণ চাপা পড়ে যায় ।যদি বিশেষ কিছু না থাকে তবে বিশিষ্ট জনেরা চুপ থাকে l ঐ দিকে ধর্ষক হাসতে থাকে আর ধর্ষিতা কাঁদতেই থাকে । সমালোচনা শেষ হয়ে যায় নতুন ইস্যু আসে ধর্ষকের হাসি থেমে যায় ।কিন্তু ধর্ষিতার চোখের পানি শেষ হয় না ।কেউ মুছে দিতেও আসে না ।কিন্তু কেন এই অমানবিকতা ।আর কত অবলা নারী এই রকম অমানবিক আচারণের স্বীকার হবে ।
আমি ধর্ষণ প্রতিরোধ কল্পে এখন কিছু অভিমত দেব ।
@** ধর্ষক মানে হচ্ছে একটা পুরুপুরি দুইপেয়ে জানোয়ার ।এই জানোয়ারকে আপনি মানুষ বানানাতে পারবেন না ।তাকে আপনি নীতি কথা শিখাতে পারবেন না ।কারণ চোরে (পড়ুন জানোয়ার) শুনে না ধর্মের কাহীণি ।আর যারা ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের ধর্ম নিয়ে অহেতুক তর্ক করে ধর্ষণে ঘটনাকে চাপা দেয় তারা নিজেরাই ধর্ষক অর্থাৎ ধর্ষকের পক্ষ নেয় ।ধর্ষকের কোন ধর্ম নাই ।কারণ কোন ধর্ম ধর্ষণকে বৈধতা দেয়নি ।ধর্ষক যেহেতু ধর্ম বিরোধী কান্ডে লিপ্ত তাই সে কোন ধর্মের অনুসারী হতে পারে না ।দয়া করে আর কোন ধর্ষণের ঘটনায় ধর্মের দোহায় দিয়ে ধর্ষকের পক্ষে সাফাই গাইবেন না ।
@** ধর্ষক কিন্তু ধর্ষক হয়ে জম্মায় না ।এই সমাজেই তার জম্ম ও বেড়ে উঠা ।সুতরাং একজন মানুষ ধর্ষক হওয়ার পেছনে তার সমাজ তথা পরিবেশ অনেকাংশে দায়ি ।সমাজ যদি শুদ্ধ হয় তবে তার সদস্যও শুদ্ধ হয় ।সমাজিকীকরণ একটি মানুষের জম্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে ।সুতরাং ধর্ষণের মত অপরাধকে প্রতিরোধে প্রথমে সমাজ ব্যবস্থার দিকে মনযোগ দিতে হবে ।কারণ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম ।
আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থার অবস্থা নতুন করে না বললেও চলবে ।পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের কারণে যে ভাবে অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির চর্চা হয় তাতে ধর্ষণের মত অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলতেছে ।আর এই অপসংস্কৃতির প্রবেশ ধার হচ্ছে প্রধানত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ।পশ্চিমা ও ভারতীয় নোংরা সংস্কৃতির প্রচারক এই স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ কর্তা হয়েও সরকার সে গুলোর প্রচার নিষিদ্ধ না করে ধর্ষণের মত জগণ্য অপরাধকে উৎসাহিত করছে ।পর্ণ ওয়েভ সাইটের সহজলভ্যতাও বাধাহীন ব্যবহার ধর্ষককে উত্তেজিত করে ।ছাত্র ও যুব সমাজকে বিপদগামী করে তুলছে ।যেই ফেইসবুকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে লিখা হয় সেই ফেইসবুকেই হাজার হাজার অশ্লীল ফেইজ অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত । জানোয়ারকে আরো হিস্র করতে সমাজ কতটা দায়ি চিন্তা করে দেখুন ।কিছুদিন আগে একদল কিশোর ব্লু ফ্লিম দেখে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ।তা হয়ত অনেকে ভুলে গেছেন ।সুতরাং সমাজে অশ্লীল নোংরামি বন্ধ না করে ধর্ষণের জন্য আন্দোলনে যাওয়া কান্ড জ্ঞানহীনতার বহিঃপ্রকাশ ।অশ্লীল বিলবোর্ড ,অবৈধ অশ্লীল সিনেমা হল,মাদক ব্যবহার ,পর্ণ ওয়েভ সাইট বিনা শর্তে নিষিদ্ধ করতে হবে ।শুধু ধর্ষকের শাস্তির ব্যবস্থা করে ধর্ষণ কমানো যায় না ।একজন ধর্ষককের মৃত্যুদন্ড দিয়ে সমাজ যদি দশজন ধর্ষক তৈরী করে তবে তা হবে ইচ্ছাকৃত অশান্তি সৃষ্টি করা ।আগে সমাজ বদলানোর পদক্ষেপটা নেওয়া যাক ,শুদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হোক ।তারপর....
@** ধর্ষণ প্রতিরোধে নারীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।নিচে নারীর করণীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
ধর্ষককে আমি নৈতিকতা শিখাতে পারব না ।কিন্তু ধর্ষিতা নৈতিকতা শিখতে পারে নিজ প্রয়োজনে ।নিজ প্রয়োজনে পর্দা করতে হবে ।কারণ পর্দা করলে অনেক নিরাপদ থাকা যায় ।আপনি পর্দা করলে আমার কোন লাভ নাই ।আপনার ভাল জন্যই আপনার থেকে ধরা বাধা নিয়ম মেনে চলতে হবে ।পৃথিবী, চন্দ্র ,সূর্য যদি নিয়ম শ্রীঙ্খলা মেনে চলতে পারে তবে আপনি কেন পারবেন না ।বোরকা পরিধান করে পর্দা করতে হবে এমন কোন কথা নাই ।আপনার থেকে যেই পোষাক পর্দা করতে সুবিধাজনক সেই পোষাক আপনি পরিধান করুন l
-- বিবেকবান পুরুষ যে কোন নারীকে একটু সম্মানের চোখে দেখে ।নারীর প্রতি একটু দুর্বল প্রকৃতির হয় ।কিন্তু নারী যদি পুরুষের সেই দুর্বলতাকে ক্ষমতা ভেবে অপব্যবহার করে তবে নারী বিপদের সম্মুখীন হতে পারে ,যদি সেই বিবেকবান পুরুষের জায়গায় লম্পট কেউ থাকে ।
---আপনাকে কর্মক্ষেত্রে যতটা সম্ভব অনাত্মীয় পুরুষের সঙ্গ পরিহার করতে হবে ।বাস্তবতাকে যে যত সহজে মেনে নিতে পারে সেই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ।পর্দা করা আপনার দুর্বলতা নয় বরং এটি আপনার সম্মান ।একজন পর্দাশীল নারীকে যত সম্মানীত মনে হয় ,একজন বেপর্দা নারী ততটা মনে হয় না ।
--- কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব শত্রুতা ধর্ষণে কারণ হতে পারে সে ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা অবলম্বন করুন ।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনের সহায়তা নিন ।
---কিছু নারীর অশ্লীল চালচলন ধর্ষণের হার বাড়িয়ে দেয় ।এই সব বেহায়া নারী গুলো ধর্ষকের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে ।ধর্ষক তখন উত্তেজিত হয়ে সাধরন নারীকে ধর্ষণ করে ।দেখুন, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়িয়ে পড়ে ।
--আরো একটা বিষয় হচ্ছে এক হাতে তালি বাজে না ।ধর্ষিতারও মাঝে মধ্যে কসুর থাকে ।তবে সব ক্ষেত্রে নয় ।তাই আপনাকেও শুদ্ধ হতে হবে ।
আমার এই পরামর্শ একজন বোনের প্রতি ভাইয়ের মায়ের প্রতি সন্তানের ,স্ত্রীর প্রতি স্বামীর, কন্যার প্রতি পিতার ।
@ ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে প্রয়োজনীয় প্রতিকার ব্যবস্থাও নিতে হবে ।ধর্ষণের ঘটনা তদন্ত করে ধর্ষকের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে ।এর দায়িত্ব প্রশাসনের ।ধর্ষককে সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ।সামাজিক ভাবে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে ।ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দিলে ধর্ষিতা তাঁর ইজ্জত ফিরে পাবে ,তা নয় ।ধর্ষককের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্য হচ্ছে ঐ ধর্ষক সহ অন্যদের শিক্ষা দেয়া, ধর্ষক হত্যা নয় ।
এই সব গুলো প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করলে নিশ্চিত ভাবে ধর্ষণের মত অপরাধ ধাপে ধাপে শূণ্যের কোটায় নেমে আসতে বাধ্য ।সুতরাং সমস্যা সমাধানের সৎ উদ্দেশ্য থাকলে আগে এই গুলো বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করুন ।তাতে শুধু ধর্ষণ নয় যেকোন ধরণের অপরাধ কমে যাবে ।
বিষয়: বিবিধ
১০১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন